শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে জীবিত কিংবদন্তী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক শিল্পমন্ত্রী এবং বর্তমান ঝালকাঠী সদর আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আল্হাজ্ব আমির হোসেন আমু‘র বয়স যখন সাত বছর তখন দ্বি-জাতিতত্বে উপ-মহাদেশ দ্বিখন্ডিত হলো।
তার চোখের সামনে উঠোন দিয়ে যেতো মিছিলকারীরা – কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, কখনও কৃষক প্রজা পার্টি, কালেভদ্রে স্বরাজ পার্টিও। যখন তিনি বিএম কলেজ থেকে বিএ পাশ করলেন তখন পাক-ভারত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়, তা ছিলো সীমান্ত সংঘাত এবং পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক আরো নানা ইস্যূতে।
ঢাকা যাবার পথে সে সময়ে বেশ করে তিনি ভাবছিলেন খুব সম্ভব একটি ভয়ংঙ্কর যুদ্ধের জন্য বাঙ্গালীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই তিনিসহ অন্যান্য ছাত্র নেতৃবৃন্দ’গনদের কাছে এটা স্পষ্ট হতে থাকে যে, পশ্চিম পাকিস্থান তথা করাচী, রাওয়ালপিন্ডি, ইসলামাবাদ কি রকম আচরন করবে ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশালের সাথে।
১৯৫৪ সালে সম্মুখ সারিতে ক্যাম্পিং তথা আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেল থেকে বের হয়ে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নির্বাচনী রাজনীতির পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যান, বিএম কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য রাজনীতির জীবনে আমীর হোসেন আমু ১৯৫৯ সালে বাংলা ভাষার জন্য শহীদ দিবস উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হন। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ১৯৬৩ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, ১৯৬৫ থেকে ৬৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন, ১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে তিনি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদ বাকসু’র ভিপি ছিলেন, ষাটের দশকের মধ্যভাগে তিনি বরিশাল জেলায় সামরিক শাসন বিরোধী মিস ফাতেমা জিন্নাহের নির্বাচনী এলাকায় সর্বদলীয় নির্বাচনী প্রচার কমিটির আহবায়ক হিসাবেও দ্বায়িত্ব পালন করেন, ৭০’র সাধারন পরিষদ নির্বাচনে তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, যশোর, ফরিদপুর সংগ্রামী অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে আমির হোসেন আমু যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র সদস্য হিসাবে মনোনীত হন, ১৯৭৩ সালে তিনি ঝালকাঠী সদর, রাজাপুরে নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, ১৯৭৫ সালে তিনি ঝালকাঠীর গভর্ণর নির্বাচিত হন, ৭৫’র অগাষ্ট ট্র্যাজেডীর পর জননেতা আমীর হোসেন আমু ১৯৭৮ সাল র্পন্ত অন্তরীন হন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কিংবা তৎকালীন সরকার কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করতে ব্যর্থ হলে হাইকোর্ট তাকে মুক্তি দেবার আদেশ দেয়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করেন অত্যন্ত দৃঢ় এবং সাহসিকতার সাথে, একই সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ- সম্পাদকের দ¦ায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি সে পদে বহাল থাকেন, ১৯৯২ সালে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন অন্যতম জাতীয় নেতৃত্ব, ১৯৯১ সালে খালেদা সরকার তাকে জেলে নিক্ষেপ করে, কিন্তু বারবার কারাবরনকরী সংগ্রামী জননেতা আমীর হোসেন আমুকে কোন জেলই বন্দী করে রাখতে পারেনি, জনতার নেতা ফের ফিরে আসে জনতার মাঝে।
তিনি পাচঁবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন এবং সৌদী রাজপরিবারের আমন্ত্রনে, রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে ( ১৯৯৫,৯৭,৯৮,৯৯,২০০০ সাল), ১৯৯৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন, ,৭ম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী, ৯ম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, ২০১৩ সালে দক্ষিন আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ৫৯ কমনওয়েলথ সংসদীয় সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অংশ গ্রহন করেন, ২০১৪ সালে তিনি শিল্পমন্ত্রী হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। জননেতা আমীর হোসেন আমু ইতিহাসের শুধু স্বাক্ষীই নন, তিনি সেই ইতিহাস রচনার এক সম্মুখ সারির নেতৃত, অন্যতম রচয়িতা। কবি আবু জাফর ওবায়েদুল্লাহ বলেছেন- আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি, তার পীঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিলো.. সেই ক্ষত মুছিয়ে দিতে বাংলার কত আমীর হোসেন আমু রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, জেলের ভিতরে কি বাইরে পুলিশ-মিলিটারীর ব্যাটন আর ভারী বুটের আঘাতে শরীরে রক্ত জবার মত ক্ষত নিয়ে জর্জরিত হয়েছে, দগ্ধ হয়েছেন কিন্তু সংগ্রামের পথ ছাড়েননি, যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠার মোহে সরে যাননি। মন্ত্রীত্ব, জনপ্রতিনিধিত্ব, তত্বাবধায়ক সরকার সবস্তরেই আমীর হোসেন আমু অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ একজন রাজনীতিবিদ। সমাজসেবক হিসাবেও তিনি কালোত্তীর্ন, অনেক রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, মসজিদ, মন্দির, এতিমখানা, স্কুল, কলেজ নির্মান করেছেন, সংস্কার করেছেন। ১৯৪০ সালে ঝালকাঠী (তখন মহকুমা) তে জন্মগ্রহন করেন আমীর হোসেন আমু।
তার পিতার নাম মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, মাতা আকলিমা খাতুন। সারা জীবনে আমীর হোসেন আমু মানুষের অধিকার আদায়, স্বাধীনতা, দেশ পূনর্গঠন, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য জাতীয় থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে কত কি যে করেছেন লিখতে গেলে হবে তা মহাকাব্যসম। ঝালকাঠী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমীর হোসেন আমুর কাছে গোটা দেশটাই প্রিয়। সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি আর কীর্তিপাশার ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠীর সন্তান আমীর হোসেন আমু দেশ- জাতি গন্ডি পেরিয়ে মহাদেশীয় পরিসরে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং দেশ পূনর্গঠন আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র!
* তোমাদেরকে কি বলা হয়েছিলো সারা জীবনের রাস্তায় আধাঁর বিরোধী সমাবেশের কথা? চৈত্রের খড়া, শ্লোগানের ঝাঁঝালো মিছিল সকালকে গড়িয়ে দেয় দুপুর আর শেষ বিকালের দিকে , প্রবল বর্ষনে মধ্যরাত হারিয়ে যায় ধলপহরের আলোয়, সে আলোয় দেখা যায় বাংলার মুখ, অজস্ ধ্বংস-মৃত্যূ-রক্তপাতে ধীরে ধীরে আসে রৌদ্রের দিন, এখনও প্ল্যাকার্ড, ফেষ্টুন হাতে দেশপ্রেমিকদের মিছিলে মিশে যায় যুবক; সকল জরাজীর্ন ভুলে দেশটাকে সাজাবে বলে.. বাকঁখালির মুখে নৌকাবাইচ এখনও ফিরিয়ে আনে অতীত..
Leave a Reply